বিপদাপদের কারণ ও আমাদের করণীয় , এইচ এম মুশফিকুর রহমান

Hello dear guest - Welcome to MR Laboratory . You have come to MR Laboratory for information about বিপদাপদের কারণ ও আমাদের করণীয় , এইচ এম মুশফিকুর রহমান Today I will conclude this article by discussing বিপদাপদের কারণ ও আমাদের করণীয় , এইচ এম মুশফিকুর রহমান in detail. Search Google to know more about বিপদাপদের কারণ ও আমাদের করণীয় , এইচ এম মুশফিকুর রহমান write বিপদাপদের কারণ ও আমাদের করণীয় , এইচ এম মুশফিকুর রহমান or click here mrlaboratory.com for visit. See the page Table of content for know the main topic of this article.




দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ সকলের জীবনেই রয়েছে। দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সম্পদশালী থেকে শুরু করে হতদরিদ্র, অসহায় গরীব-মিসকিন পর্যন্ত সকলকেই জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে কোন না কোন কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। এটাই বাস্তবতা। কিন্তু খুব কম মানুষই এ কথা উপলব্ধি করে যে, জীবনের সুখ-দুঃখের প্রতিটি ঘটনা সুনির্দিষ্ট কারণে এবং সুনিয়ন্ত্রিতভাবে সংঘটিত হচ্ছে। প্রতিটি ঘটনার রয়েছে তাৎপর্য, কেননা প্রতিটি ঘটনাই সুমহান আল্লাহ্ তা‘আলার ইচ্ছা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী সংঘটিত হয়। জীবনের উত্থান-পতন, দুঃখ, বেদনা, নিয়ে হতাশ হয়ে কোন লাভ নেই। কারণ জীবন থেকে দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-মুসিবতকে আলাদা করা যায়না।

আল্লাহ তা‘আলার ঘোষণা, ‘পৃথিবীতে আর তোমাদের জীবনে যে বিপদ আসে তা আমি ঘটানোর পূর্বেই লিখে রেখেছি।’ [সূরা আল হাদীদ: ২২] সুতরাং জীবনের অর্থই হলো-সংগ্রাম, পরিশ্রম, কাজ আর দায়িত্বের এক মহা-সমাহার। তার মধ্যে সুখ হলো একটি ব্যতিক্রম বা একটি ক্ষণস্থায়ী পর্ব, যা বিক্ষিপ্তভাবে আসে আর যায়। কিন্তু এসবের মাঝেও মানুষ জীবনকে দারুণভাবে উপভোগ করতে চায়, অথচ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য দুনিয়াকে স্থায়ী আবাস হওয়া পছন্দ করেন না। কারণ, তিনি বান্দার জন্য অনন্ত জীবনের উপভোগ্য নেয়ামত জান্নাত তৈরি করে রেখেছেন। দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ নির্ধারিত পথে সফলতা অর্জন করে কেবল সে জান্নাত লাভ করা যাবে। অন্য কোন কিছুর বিনিময়ে নয়। এ পৃথিবী যদি পরীক্ষার স্থান না হতো, তবে এটা বিপদ-মুসিবত, রোগ-বালাই ও দুঃখ-কষ্ট মুক্ত হতো। বিপদাপদের ধরন আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে পরীক্ষা করার বিষয়ে কুরআনে উল্লেখ করেন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু ধন-সম্পদ-প্রাণ ও ফলের ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করব। আর আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন। যারা তাদের ওপর কোনো বিপদ-আপদ আসে; তখন তারা বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চিতভাবে তার দিকেই ফিরে যাব।’ [সূরা বাকারা : ১৫৫-১৫৬] ‘আমি আপনার পূর্ববর্তী উম্মতদের কাছে পয়গম্বর প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর আমি তাদের অভাব-অনটন ও রোগব্যাধি দিয়ে পাকড়াও করেছিলাম, যাতে তারা কাকুতি-মিনতি করে।’ [সূরা আনআম : ৪২] মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন, ‘তোমরা কি মনে করেছো যে, তোমরা অতি সহজেই জান্নাতে চলে যাবে? অথচ তোমরা এখনো সেই লোকদের অবস্থা অতিক্রম করোনি যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে। তাদের উপর এসেছে বহু বিপদ মুসিবত ও দুঃখ কষ্ট। তাদেরকে অত্যাচারে নির্যাতনে এমনভাবে জর্জরিত করে দেওয়া হয়েছিল যে, শেষ পর্যন্ত তৎকালীন রাসূল এবং তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তারা আর্তনাদ করে বলে উঠেছিল আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? তখন তাদেরকে সান্তনা দিয়ে বলা হয়েছিল, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।’ [সূরা বাকারাহ : ২১৪]

সাম্প্রতিক ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রতলের ভূমিকম্প (সুনামি), লন্ডনে ম্যাগকাউ, আমেরিকার হ্যারিকেন কাটরিনা ও ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল, মেক্সিকোর ভূমিকম্প, অস্ট্রেলিয়ার দাবানল, চীনের খনি ধ্বস ও দাবানল, বাংলাদেশে সিডর, আইলা ও ডেঙ্গু জ্বর, বার্মায় নার্গিস, বিশ্বব্যাপী এইড্স মহামারি, বার্ড ফ্লু ও সোয়াইন ফ্লু, ভূগর্ভের পানিতে আর্সেনিক দূষণ, আকাশে বায়ু দূষণ, নদীতে পানি দূষণ, আরব ভূমিতে বালু দূষণ, ফসলে বরকত নষ্ট হওয়া, মাছ-মাংস ও শস্য-ফলাদির স্বাদ ও ফলন কমে যাওয়া, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরা ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি নানাবিধ বিপদাপদ। বিপদাপদের কারণ নানাবিধ কারণে বিশ্ববাসী আজ বিভিন্ন সংকট ও দুর্দশায় জর্জরিত। বিপদ যেন পিছু ছাড়ছে না। আলেম-ওলামাদের অভিমত হলো, দুনিয়ার পার্থিব বিপর্যয় ও বালা-মুসিবতের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতা ও নাফরমানি। নানাবিধ পাপাচারের ফলে বিশ্ববাসী আজ বিভিন্ন সংকট ও দুর্দশায় জর্জরিত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের ওপর যেসব বিপদাপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ মোচন করে দেন।’ [সূরা শূরা : ৩০] বান্দার কিছু বিপদ পূর্বে থেকেই নির্ধারিত যা আল্লাহ তা‘আলা বান্দার পরীক্ষার জন্য দিয়ে থাকেন। কখন, কিভাবে, কোথায় ও কী পরিমাণ শাস্তি হবে তা আগে থেকেই লিপিবদ্ধ। এরূপ বিশ্বাসের ফলে বিপদের কারণে বান্দার দুঃখবোধ হয় না। পক্ষান্তরে বিপদ থেকে মুক্তি পেলে অহঙ্কার প্রকাশের কোনো অবকাশ থাকেনা। এ প্র্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ ব্যতীত কেনো বিপদ আসেনা, আর যে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ তা‘আলা সব বিষয়ে জানেন।’ [সূরা তাগাবুন : ১১] কখনো কখনো মানুষের ঈমানি পরীক্ষাস্বরূপ বালা-মুসিবত এসে থাকে। এতে ধৈর্যধারণে তাদের মর্যাদা বেড়ে যায়। বিপদাপদ আল্লাহর পয়গম্বরদের ওপরও এসেছে। বরং তাদের বিপদের মাত্রা ছিল আরও বেশি। কিন্তু তা পাপের কারণে নয়। বরং তাদের মর্যাদা সমুন্নত করার উদ্দেশ্যে। তারা বিপদে পতিত হয়ে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করেছেন এবং আল্লাহ তা‘আলা তাদের সাহায্য করেছেন।

হযরত আইয়ুব (আ.) ও হযরত ইউনুসের (আ.) ঘটনা সবার জানা। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদও (সা.) বদরের প্রান্তরে আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতির সঙ্গে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। সে হিসেবে বলা যায়, বিপদাপদ কখনও কখনও আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ এসে থাকে। আবার কখনো কখনো মানুষের ওপর বালা-মুসিবত ও বিপদ-আপদ তাদের পাপ বা অন্যায়ের কারণে এসে থাকে। হযরত ইবনে উমার রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্র্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে মুহাজির দল! পাঁচটি কর্ম এমন রয়েছে যাতে তোমরা লিপ্ত হয়ে পড়লে শাস্তি তোমাদেরকে গ্রাস করবে। আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাই তোমরা যেন তা প্রত্যক্ষ না কর। ১. যখনই কোন জাতির মধ্যে অশ্লীলতা প্রকাশ্যভাবে ব্যাপক হবে তখন সে জাতির মাঝে প্লেগ ও এমন রোগ ব্যাপক হবে, যা তাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে ছিল না। ২. যে জাতি মাপে কম দিবে সে জাতি দুর্ভিক্ষ, খাদ্য সংকট এবং শাসকগোষ্ঠির অত্যাচারের শিকার হবে। ৩. যে জাতি যাকাত দেওয়া বন্ধ করবে সে জাতির জন্য বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হবে। যদি অন্যান্য প্রাণীকুল না থাকত তাহলে তাদের জন্য আদৌ বৃষ্টি হত না। ৪. যে জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে সে জাতির উপরে তাদের বিজাতীয় শত্রুদলকে ক্ষমতাসীন করে দেওয়া হবে, যারা তাদের বহু ধন-সম্পদ নিজেদের কুক্ষিগত করবে। ৫. যে জাতির শাসকগোষ্ঠী আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী দেশ শাসন না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি তাদের মাঝে সন্ত্রাস/গৃহযুদ্ধ স্থায়ী রাখবেন।’ [বায়হাকী ও ইবনে মাজাহ]

হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন আমার উম্মত দশটি কাজ করবে, তখন তাদের উপর বিপদ নেমে আসবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! কাজগুলো কী কী? তিনি বললেন: ১. যখন রাষ্ট্রীয় সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে মনে করা হবে। ২. যখন আমানত হিসেবে রক্ষিত সম্পদকে লুটের মাল হিসাবে গ্রহণ করা হবে। ৩. যখন যাকাতকে জরিমানার মত মনে করা হবে। ৪. স্বামী যখন স্ত্রীর আনুগত্য করবে এবং মায়ের অবাধ্য হবে। ৫. যখন মানুষ বন্ধুর প্রতি সদাচারী এবং পিতার সাথে দুর্ব্যবহারকারী হবে। ৬. মসজিদে হৈ চৈ হবে। ৭. জনগণের নেতা হবে সেই ব্যক্তি যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী। ৮. যখন মানুষকে তার ক্ষতির আশঙ্কায় সম্মান প্রদর্শন করা হবে। ৯. যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের হিড়িক পড়ে যাবে। ১০. যখন উম্মতের পরবর্তীরা পূর্বর্তীদেরকে অভিশাপ দেবে। তখন আগুনের বাতাস আসবে, মাটির ধস ও দেহের বিকৃতি ঘটবে।’ [সুনানে তিরমিযী ও সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব: ১৫৪১] হযরত সাওবান রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এমন এক সময় আসবে, যখন তোমাদের নিধনের জন্য বিভিন্ন (কাফের) গোষ্ঠি একে অপরকে আহ্বান করবে। ঠিক যেমন অভুক্ত খাদকদের আহ্বান করা হয়, (মুখরোচক খাবারের) পাত্রের প্রতি। তখন একজন বলে উঠলেন, আমাদের সংখ্যাসল্পতার কারণে কি সেদিন এমন দুরাবস্থা হবে? ইরশাদ হলো-বরং সেদিন সংখ্যায় তোমরা অনেক বেশি, অনেকটা প্রবাহমান পানির ফেনার মতো (পরিমাণে অধিক অথচ অন্ত:সারশূন্য) থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের প্রতি ভয়-ভীতি তুলে দিবেন (তারা তোমাদের খুবই নগণ্য ভাববে)। আর তোমাদের অন্তরে ‘ওয়াহান-বা দুর্বলতা’ সৃষ্টি করে দিবেন। জনৈক প্রশ্নকর্তা জানতে চাইলেন-‘ওয়াহান’ কী? ইরশাদ হলো-দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যুভীতি।’ [আবু দাউদ: ৪২৯৭] হযরত হুজাইফা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ঐ সত্তার কসম যার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, তোমরা সৎকর্মের আদেশ করতে থাক এবং অন্যায় কর্মের বাধা দিতে থাক। অন্যথায় খুব শীঘ্রই হয়তো আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের উপর আযাব নাযিল করবেন। তখন তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে আযাব হটিয়ে দেওয়ার জন্য দু‘আ করবে। কিন্তু তিনি কবুল করবেন না।’ [তিরমিযী: ২/৩৯]

হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সময় নিকটবর্তী হবে (অর্থাৎ যাতায়াত এবং সংবাদ আদান প্রদানে বেশি সময় লাগবে না) এবং ধর্ম বিদ্যার মৃত্যু হবে। বিপদাপদ দেখা দিবে, কৃপণতা দেখা দিবে এবং হারাজ বেড়ে যাবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন ‘হারাজ’ কী? উত্তরে আল্লাহর হাবীব আমাদের প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হত্যা।’ [বুখারী ও মুসলীম] আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের মধ্যে উত্তম লোকেরা তোমাদের নেতা (রাষ্ট্রপ্রধান) হয়, ধনীরা দানশীল হয় এবং রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পাদিত হয়, তখন তোমাদের জন্য জমিনের নিম্নভাগ থেকে জমিনের উপরিভাগ উত্তম। আর যখন তোমাদের মধ্যে ধনী লোকরা কৃপণ হয়, কার্যাবলি মহিলাদের নির্দেশমতো চলে, তখন তোমাদের জন্য জমিনের উপরিভাগ থেকে জমিনের নিম্নভাগ উত্তম।’ [তিরমিজি, পৃষ্ঠা : ৪৫৯] ধ্বংসপ্রাপ্ত বিগত জাতিসমূহ পৃথিবীতে মানুষের আগমনকাল থেকে এযাবত আল্লাহর গযবে ধ্বংসপ্রাপ্ত ছয়টি জাতির কথা কুরআনের মাধ্যমে জগদ্বাসী জানতে পেরেছে। তারা হল কওমে নূহ, ‘আদ, ছামূদ, লূত্ব, আহলে মাদইয়ান ও কওমে ফেরাউন। উপরোক্ত ছয়টি জাতির ধ্বংসের কারণ ও ধরণগুলি ছিল নিম্নরূপ: ১. কওমে নূহ: এদের ধ্বংসের কারণ ছিল ‘শিরক’। তারাই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মূর্তিপূজার শিরকের সূচনা করে। ওয়াদ, সুআ‘, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক্ব ও নাছর নামক পাঁচজন নেককার মৃত মানুষের অসীলায় এরা আল্লাহর সাহায্য কামনা করত। এতদ্ব্যতীত তারা নানাবিধ অন্যায়-অত্যাচারে নিমজ্জিত হয়েছিল। এদের হেদায়াতের জন্য নূহ (আঃ)-কে প্রেরণ করা হয়। তিনি দীর্ঘ সাড়ে নয়শত বছর জীবন পেয়েছিলেন এবং এই দীর্ঘ সময় ধরে তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দিয়ে ব্যর্থ হন ও তাদের সমাজ নেতাদের নিগ্রহের শিকার হন। অবশেষে তাঁর বদদু‘আয় পুরা কওম দীর্ঘস্থায়ী প্লাবনে ডুবে ধ্বংস হয়। কেবল ৮০ জন ঈমানদার নারী ও পুরুষ আল্লাহর হুকুমে তাঁর কিশতীতে ঠাঁই পায়। বর্তমান পৃথিবীর সকল মানুষ তাদেরই উত্তরসুরী।

 ২. কওমে ‘আদ: এরা ছিল নূহের পঞ্চম অথবা অষ্টম অধঃস্তন পুরুষ এবং নূহ-পুত্র সামের বংশধর। জর্ডান থেকে হাযারামাউত ও ইয়ামন পর্যন্ত এদের বসবাস ছিল। এরা ছিল বিশালদেহী ও দারুন শক্তিশালী ও দুধর্ষ জাতি। এরা শিরক ও কুফরীতে লিপ্ত হয়। ফলে তাদের কাছে তাদের মধ্য হতে হূদ (আঃ)-কে নবী করে পাঠানো হয়। তিনি তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দেন ও শিরক পরিত্যাগ করে আল্লাহর পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান। তিনি তাদেরকে আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখান। তাতে তারা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে বলে, ‘আমাদের চেয়ে শক্তিশালী আর কে আছে’? [সূরা হামীম সাজদাহ:১৫] শিরক ছাড়াও তাদের মধ্যে প্রধান তিনটি পাপের কথা কুরআনে উল্লিখিত হয়েছে- ১. তারা অযথা উঁচু স্থানসমূহে সুউচ্চ টাওয়ার ও নিদর্শনসমূহ নির্মাণ করত যা ¯্রফে অপচয় ব্যতীত কিছুই ছিল না। ২. তারা অহেতুক মজবুত প্রাসাদসমূহ তৈরি করত আর ভাবত যেন তারা সেখানে চিরকাল বসবাস করবে । ৩. তারা দুর্বলদের উপর নিষ্ঠুরভাবে আঘাত হানতো এবং মানুষের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন করত।’ [সূরা শো‘আরা:১২৮,১২৯,১৩০] গযবের বিবরণ : পরপর তিন বছর বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকে। ফলে তাদের বাগ-বাগিচা ও ফসলাদি সব জ্বলে-পুড়ে শেষ হয়ে যায়। অবশেষে তারা আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করে। ফলে মেঘ আসে। কিন্তু তা ছিল গযবের কালো মেঘ। হঠাৎ বিকট গর্জন ও বজ্রাঘাতে ও প্রবল ঘুর্ণিঝড়ে তারা সব ধ্বংস হয়ে যায়। শক্তিশালী ঐসব অহঙ্কারী মানুষগুলিকে ঝড়ে উপরে উঠিয়ে সজোরে মাটিতে আছাড় দিয়ে মেরে ফেলে। এইভাবে আট দিন ও সাত রাত্রি ব্যাপী ধ্বংসলীলা চালিয়ে [সূরা ক্বামার :২০; সূরা হা-ক্কাহ:৬-৮] শক্তিশালী ‘আদ জাতিকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করা হয়।

৩. কওমে ছামূদ: ‘আদ জাতির ধ্বংসের অন্তত পাঁচশত বছর পরে তাদেরই অন্যতম শাখা ছামূদ জাতির উপর গযব নেমে আসে। এদের প্রধান শহরের নাম ছিল হিজ্র, যা শাম বা সিরিয়ার অন্তর্ভুক্ত। এরাও ‘আদ জাতির ন্যায় শক্তিশালী ছিল ও বৈষয়িক উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করেছিল। পার্থিব বৈভব ও ধন দৌলতের অহঙ্কারে মত্ত হয়ে তারা ‘আদ জাতির মত আচরণ শুরু করে দেয়। শিরক ও মূর্তিপুজায় লিপ্ত হয়। পথভ্রষ্ট এই জাতিকে হেদায়াতের জন্য তাদের ভাই ছালেহ (আঃ)-কে তাদের কাছে নবী করে পাঠানো হয়। কিন্তু তারা তার প্রতি উদ্ধত আচরণ করে। তারা আল্লাহ প্রেরিত উষ্ট্রীকে হত্যা করে এবং আল্লাহর গযবকে চ্যালেঞ্জ করে। এমনকি তারা তাদের নবী ছালেহ (আঃ)-কে রাতের বেলা সপরিবারে হত্যার চক্রান্ত করে এবং এ ব্যাপারে নয়টি দলের নয়জন নেতা নেতৃত্ব দেয়।’ [সূরা নমল:৪৮-৪৯] অবশেষে নবী তার ঈমানদার সাথীদের নিয়ে আল্লাহর হুকুমে এলাকা ত্যাগ করেন এবং যথারীতি গযব নেমে আসে। আল্লাহ বলেন, ‘আমরা তাদের প্রতি একটি মাত্র নিনাদ পাঠিয়েছিলাম। তাতেই তারা শুকনো খড়কুটোর মত হয়ে গেল।’ [সূরা ক্বামার:৩১] ‘ভীষণ একটি ভূমিকম্পে এবং বিকট এক গর্জনে সবাই যার যার স্থানে একযোগে অধোমুখী হয়ে ভূতলশায়ী হ’ল।’ [সূরা আ‘রাফ:৭৮] এবং এমনভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হ’ল যেন তারা কোনদিন সেখানে বসবাস করেনি।’ [সূরা হূদ:৬৭-৬৮] মূলতঃ উদ্ধত ও পথভ্রষ্ট নয় জন নেতার কারণেই এই কওম আল্লাহর গযবের শিকার হয়। ৪. কওমে লূত্ব : চাচা ইবরাহীমের সাথে লূত্ব জন্মভূমি ইরাকের বাবেল শহর থেকে হিজরত করে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের অদূরে কেন‘আনে চলে আসেন। অতঃপর সেখান থেকে অনতিদূরে জর্ডান ও ফিলিস্তীনের মধ্যবর্তী ‘সাদূম’ অঞ্চলের অধিবাসীদের হেদায়াতের জন্য আল্লাহ পাক লূত্ব (আঃ)-কে সেখানে নবী করে পাঠান। সাদূমসহ সেখানে সমৃদ্ধ পাঁচটি শহর ছিল। কুরআনে এগুলিকে একত্রে ‘মু’তাফিকাত’ বা উল্টানো জনপদসমূহ বলে অভিহিত করা হয়েছে [সূরা তওবাহ:৭০; সূরা হাক্বক্বাহ:৯] দুনিয়াবী উন্নতির চরম শিখরে উঠে এরা আল্লাহকে ভুলে যায় এবং শিরক ও কুফরীতে লিপ্ত হয়। রাহাজানিসহ নানাবিধ দুষ্কর্ম এদের মজ্জাগত হয়ে পড়ে। এমনকি এরা প্রকাশ্য মজলিসে পুংমৈথুন বা সমকামিতার মত নোংরামিতে লিপ্ত হয়। যা ইতিপূর্বে ধ্বংসপ্রাপ্ত কোন জাতির মধ্যে পরিদৃষ্ট হয়নি। লূত্ব (আঃ) তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে ব্যর্থ হলেন। অবশেষে তারা আল্লাহর গযবের শিকার হয়। আল্লাহর হুকুমে লূত্ব (আঃ) স্বীয় ঈমানদার সাথীদের নিয়ে কিছু রাত থাকতেই গৃহত্যাগ করেন। অতঃপর সুবহে সাদিকের সময় একটি প্রচ- নিনাদের মাধ্যমে গযব কার্যকর হয়। যা তাদের শহরগুলিকে সোজা উপরে উঠিয়ে উপুড় করে ফেলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে প্রবল ঘূর্ণিবায়ুর সাথে প্রস্তর বর্ষণ শুরু হয়। আল্লাহ বলেন, ‘অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছল, তখন আমরা উক্ত জনপদের উপরকে নীচে করে দিলাম এবং তার উপরে স্তরে স্তরে কংকর-প্রস্তর বর্ষণ করলাম’। ‘যার প্রতিটি তোমার রবের নিকটে চিহ্নিত ছিল। আর ঐ ধ্বংস স্থলটি (বর্তমান আরবীয়) যালেমদের থেকে বেশি দূরে নয়’। [সূরা হূদ:৮২-৮৩] উক্ত ধ্বংস স্থলটি বাহরে মাইয়েত বা বাহরে লূত্ব অর্থাৎ মৃত সাগর বা লূত্ব সাগর নামে খ্যাত। যা ফিলিস্তীন ও জর্ডান নদীর মধ্যবর্তী বিশাল অঞ্চল জুড়ে নদীর রূপ ধারণ করে আছে। এতে কোন মাছ, ব্যাঙ এমনকি কোন জলজ প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না। ৫. আহলে মাদইয়ান : মাদইয়ান হল লূত্ব সাগরের নিকটবর্তী সিরিয়া ও হিজাযের সীমান্তবর্তী একটি জনপদের নাম। যা অদ্যাবধি পূর্ব জর্ডানের সামুদ্রিক বন্দর মো‘আন-এর অদূরে বিদ্যমান রয়েছে। শিরক ও কুফরী ছাড়াও এখানকার অধিবাসীরা ওযন ও মাপে কম দিত। রাহাজানি ও লুটপাট করত। তারা অন্যায়ভাবে জনগণের মাল ভক্ষণ করত। কওমে লূত্ব-এর ধ্বংসের অনতিকাল পরে হযরত শো‘আয়েব (আঃ) এদের প্রতি প্রেরিত হন। পরে ইনি হযরত মূসার শ্বশুর হন। শু‘আয়েব (আঃ)-এর দাওয়াতের জবাবে কওমের নেতারা বলল, ‘আপনার সালাত কি আপনাকে একথা শিখায় যে, আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা যুগ যুগ ধরে যেসবের পূজা করে আসছে আমরা আমাদের ঐসব উপাস্যের পূজা ছেড়ে দিই? আর আমাদের ধন-সম্পদে আমরা ইচ্ছামত যা কিছু করে থাকি, তা পরিত্যাগ করি? [সূরা হূদ:৮৭] এভাবে তারা ইবাদাত ও মু‘আমালাতকে পরষ্পরের প্রভাবমুক্ত ভেবেছিল। আর এজন্য তারা আর্থিক বিষয়ে হালাল-হারামের বিধান মানতে রাজি ছিল না। তারা তাদের জিদ ও হঠকারিতায় অনড় রইল এবং আল্লাহর গযব প্রত্যক্ষ করার হুমকি দিল। অবশেষে তাদের উপর গযব ত্বরান্বিত হ’ল। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আহলে মাদইয়ানের উপর প্রথম সাতদিন প্রচ- গরম চাপিয়ে দেওয়া হয়, যাতে অতিষ্ঠ হয়ে তারা ভূগর্ভস্থ কক্ষসমূহে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানে তিষ্টাতে না পেরে তারা জঙ্গলের দিকে যায়। আল্লাহ সেখানে একটি ঘন কালো মেঘ পাঠিয়ে দেন, যার নীচ দিয়ে শীতল বায়ু প্রবাহিত হয়। লোকেরা ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে সেখানে গিয়ে জমা হয়। অতঃপর হঠাৎ আকাশ থেকে ভীষণ নিনাদ আসে এবং নীচের দিকে ভূমিকম্প শুরু হয়। ওদিকে মেঘমালা থেকে শুরু হয় অগ্নিবৃষ্টি। অতঃপর আল্লাহদ্রোহীরা সব একত্রে ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যখন আমাদের আদেশ এসে গেল, তখন আমরা শো‘আয়েব ও তার ঈমানদার সাথীদের নিজ অনুগ্রহে রক্ষা করি। আর বিকট নিনাদ এসে যালেমদের পাকড়াও করল। অতঃপর তারা তাদের জনপদে উপুড় হয়ে পড়ে রইল’। ‘যেন তারা সেখানে কখনোই ইতিপূর্বে বসবাস করেনি।’ [সূরা হূদ: ৯৪-৯৫] ৬. কওমে ফেরাঊন : ফেরাঊন ছিল তৎকালীন মিসরের রাজাদের উপাধি। হযরত ইউসুফ (আ.)-এর অনেক পরে এরা ক্ষমতায় আসে এবং শিরক ও কুফরীতে লিপ্ত হয়। ইউসুফ-এর সময় কেন‘আন থেকে মিসরে হিজরতকারী সম্মানিত বনু ইসরাাঈলগণকে এরা সেবক ও দাস শ্রেণিতে পরিণত করে। ফেরাঊন সংখ্যাগরিষ্ট ক্বিবতীদের হাতে রেখে সংখ্যালঘিষ্ট বনু ইসরাঈলদের উপর যুলুমের চূড়ান্ত করে। মযলূম স্বজাতি বনু ইসরাাঈলদের উদ্ধার এবং ফেরাঊন ও তার কওমের হেদায়াতের জন্য মূসাকে আল্লাহ সেখানে নবী করে পাঠান। ফেরাঊন ও তার উদ্ধত মন্ত্রীরা মূসা ও হারূণের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে। অবশেষে ফেরাঊনের জাদুকরদের সাথে শক্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ইসরাাঈলী বর্ণনা অনুযায়ী মূসা বিশ বছর মিসরে অতিবাহিত করেন এবং মিসরবাসীকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে থাকেন। কিন্তু ফেরাঊনের ঔদ্ধত্য ও অহঙ্কারে কোনরূপ ব্যত্যয় না ঘটায় তার কওমের উপর নানাবিধ এলাহী গযব একে একে আসতে থাকে। যেমন, ১. দুর্ভিক্ষ ২. প্লাবণ ৩. পঙ্গপাল ৪. উকুন ৫. ব্যাঙ ৬. রক্ত ৭. প্লেগ মহামারি ইত্যাদি। প্রতিটি গযব আসার পরে ফেরাঊনের লোকজন মূসার কাছে গিয়ে ক্ষমা চায় ও দু‘আ করতে বলে। পরে গযব উঠে গেলে দু’এক বছরের মধ্যে আবার অবাধ্যতা শুরু করে। ফলে আবার গযব আসে। ফেরাঊন ও তার মন্ত্রীরা গযব সমূহকে মূসার জাদু কিংবা ¯্রফে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে মনে করত। তাই এগুলোকে তারা কোনরূপ তোয়াক্কা করত না। ফলে তাদের যুলুম অব্যাহত থাকে। অবশেষে নেমে আসে চূড়ান্ত শাস্তি এবং ফেরাঊন ও তার সৈন্যদল এক সাথে সাগরে ডুবে ধ্বংস হয়ে যায়। উপরে বর্ণিত বিগত যুগের ধ্বংসপ্রাপ্ত ছয়টি জাতির প্রত্যেকটির মধ্যে একটি মৌলিক পাপ ছিল শিরক ও কুফরী। আরেকটি ছিল প্রাচুর্য ও হঠকারিতা। বাকি পাপগুলি ছিল বিভিন্ন ধরনের। শেষনবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর দু‘আ অনুযায়ী তাঁর উম্মত এক সাথে আল্লাহর গযবে ডুবে ধ্বংস হবে না বা একসাথে সবাই দুর্ভিক্ষে মরবে না। বিপদাপদ থেকে বাঁচতে আমাদের করণীয় : ১. সবর করা : কোন জনপদে আল্লাহর গযব নাযিল হলে প্রথম কর্তব্য হল সবর করা এবং এটাকে আল্লাহর পরীক্ষা মনে করে ধৈর্য ধারণ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ، الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُواْ إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ- ‘তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীল বান্দাদের’। ‘যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁর নিকটে ফিরে যাব।’ (সূরা বাক্বারাহ: ১৫৫-৫৬] ২. বিপদ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَاعْتَبِرُوا يَا أُولِي الأَبْصَارِ ‘অতএব হে চক্ষষ্মান ব্যক্তিগণ! তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।’ [সূরা হাশর : ২] ৩. স্ব স্ব পাপকর্ম থেকে তাওবা করা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعاً أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ‘আর তোমরা সকলে (তাওবা করে) ফিরে এসো আল্লাহর দিকে হে বিশ্বাসীগণ! যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ [সূরা নূর:৩১] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنفُسِهِمْ لاَ تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعاً إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ- ‘(হে নবী!) আপনি বলে দিন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়াবান।’ [সূরা যুমার:৫৩] হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে সব ধরনের বিপদাপদ হতে মুক্ত করবেন, সব রকমের দুশ্চিন্তা হতে রক্ষা করবেন এবং এমন উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করবেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।’ [আবু দাঊদ ও ইবনে মাজাহ] ৪. বিপদগ্রস্ত ও দুর্গত মানুষের সেবায় এগিয়ে যাওয়া: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।’ [মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪] 

বিপদাপদ থেকে মুক্তির জন্য দু‘আ করা দুনিয়ার বুকে বিপদ-আপদ থেকে হেফাজতের জন্য পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ রয়েছে। যেগুলো পাঠ করে বিপদাপদ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কোন বান্দা প্রতিদিন সকালে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় তিনবার করে এই দু‘আটি পাঠ করে কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না। بِسْمِ اللّهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيمُ ‘আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমীনের কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।’ [তিরমিযী:৩৩২৪] হযরত আবু মুসা আল-আশআরী রাদিআল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা করতেন তখন বলতেন : اَللّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِيْ نُحُوْرِهِمْ وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ ‘হে আল্লাহ! আমরা তোমাকেই তাদের মুখোমুখী করছি এবং তাদের অনিষ্টতা থেকে তোমারই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। [আবু দাউদ ও নাসাঈ] আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্থ বা ব্যাধিগ্রস্থ লোককে দেখে বলে- اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ عَافَانِيْ مِمَّا ابْتَلَاكَ بِه وَفَضَّلَنِيْ عَلى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيْلًا ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি তোমাকে যে ব্যাধিতে আক্রান্ত করেছেন তা থেকে আমাকে নিরাপদে রেখেছেন এবং তার বহু সংখ্যক সৃষ্টির উপর আমাকে মর্যাদা দান করেছেন- সে কখনো উক্ত বিপদ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে না।’ [তিরমিযী] হযরত উম্মে সালমা রাদিআল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : কোন ব্যক্তির উপর কোন বিপদ এলে যদি সে বলে- إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ - اَللّهُمَّ أَجِرْنِيْ فِيْ مُصِيْبَتِيْ وَأَخْلُفْ لِيْ خَيْرًا مِّنْهَا ‘আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমাদেরকে তারই দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! বিপদে আমাকে সওয়াব দান করুন এবং যা হারিয়েছি তার বদলে তার চাইতে ভাল বস্তু দান করুন- মহান আল্লাহ তাকে তার বিপদের প্রতিদান দেন এবং সে যা কিছু হারিয়েছে তার বদলে তার চাইতে উত্তম বস্তু দেন।’ [সহীহ মুসলিম] হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিপদের সময় দু‘আ করতেন : لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ الْحَلِيْمُ الْحَكِيْمُ لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمُ لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ رَبُّ السَّموَاتِ وَالْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمُ ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তিনি পরম সহিষ্ণু ও মহা জ্ঞানী। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তিনি মহান আরশের রব। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তিনি আকাশম-লী, জমীন ও মহাসম্মানিত আরশের রব।’ [বুখারী, মুসলিম] হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রাদিআল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর নবী যুন-নুন (ইউনুস আলাইহিসসালাম) মাছের পেটে অবস্থান কালে যে দু‘আ করেছিলেন তা হল : لَا إِلهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ ‘তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তুমি পবিত্র, নিশ্চয়ই আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত। কোন মুসলিম ব্যক্তি কোন বিষয়ে এ দু‘আ করলে আল্লাহ অবশ্যই তা কবুল করেন।’ [তিরমিযী ও নাসাঈ] হযরত আলী রাদিআাল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। একটি চুক্তিবদ্ধ দাস তার কাছে এসে বলে, আমি আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধে অপারগ হয়ে পড়েছি। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। তিনি বলেন, আমি তোমাকে এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দিব যা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার উপর সীর পর্বত পরিমাণ দেনাও থাকে তবে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি বলেন, তুমি বল : اَللّهُمَّ اكْفِنِيْ بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَأَغْنِنِيْ بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ ‘হে আল্লাহ! তোমার হালাল দ্বারা আমাকে তোমার হারাম থেকে দূরে রাখ এবং তোমার দয়ায় তুমি ভিন্ন অপরের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে স্বনির্ভর কর।’ [তিরমিযী] জালিম শাসকদের জুলুম থেকে মুক্তির জন্য হযরত মুসা (আলাইহিসসালাম) এর দু‘আ; এই দু‘আ নিয়মিত পাঠে যালিম শাসকদের অন্যায় ও জুলুম থেকে মুক্তির দৃঢ় সম্ভাবনা রয়েছে। عَلَى اللّهِ تَوَكَّلْنَا رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ ০ وَنَجِّنَا بِرَحْمَتِكَ مِنَ الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ ০ ‘আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। হে আমাদের রব! আমাদেরকে যালিমদের নির্যাতনের শিকার বানাবেন না। আমাদেরকে আপনার রহমতে কাফিরদের কবল থেকে রক্ষা করুন।’ [সূরা ইউনুসঃ: ৮৫-৮৬] মুমিনগণের উপর কোন মুসিবত আপতিত হলে আল্লাহ তা‘আলা যে দু‘আ শিক্ষা দিয়েছেন- اَلَّذِيْنَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُّصِيْبَةٌ قَالُوا ] إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ ‘যখন তাদের উপর কোন মুসিবত আপতিত হয় তখন তারা বলে, (নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য আর আমাদেরকে তারই দিকে ফিরে যেতে হবে)।’ [সূরা বাকারাহ: ১৫৬] দুনিয়ার সব ধরনের বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবতে ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহর জিকির-আজকার ও তার সাহায্য কামনা করা উচিত। বিপদাপদ থেকে বাঁচতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিখানো দু‘আগুলি বেশি বেশি পড়া দরকার। আর বেঁচে থাকা দরকার আল্লাহর নাফরমানি সকল কার্যক্রম থেকে। দুনিয়ার সকল বিপদাপদ থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন।

লেখক: প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক 


from OurislamBD.Com - To Allah Ta'ala, The only nominated religion is Islam https://ift.tt/2N2HLeq
via Islamic

Note: Some images of this post have been collected from Google, Facebook and various sites. If anyone has any objections please comment - the image will be removed.

You are indeed a valued reader of MR Laboratory. Thank you so much for reading বিপদাপদের কারণ ও আমাদের করণীয় , এইচ এম মুশফিকুর রহমান article. Please let us know how you feel after reading this article.

Next post Previous post
There are no comments
Leave your comments about this post

Please comment in accordance with the policy - otherwise your comments will not be accepted.

comment url